শ্রাবণের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে - অতঃপর কবিতা

অতঃপর কবিতা

আমি তোমার জন্য কতোটা করেছি সেটা যদি সহজ করে বলতে পারতাম তাহলে প্রকৃতি আমাকে অসম্পূর্ণ করে দিতো!! ......মিতুল আহমেদ।

কবিতা

শ্রাবণের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে

শ্রাবণের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে

মিতুল আহমেদ

অতঃপর কবিতা



আজ আষাঢ় শুরু হলো ! বৃষ্টি পড়ছে ফোটায় ফোটায় যাকে বলে ইলশেগুড়ি । বিষন্ন মনে বৃষ্টির ফোটায় গাঁ ভিজিয়ে আকাশ পানে চেয়ে তোমাকেই ভাবছি । তোমার মনে আছে সেদিন ও ছিল আষাঢ়?

আমি সেদিন নীল ফাইলটা মাথায় দিয়ে বৃষ্টি আটকানোর বৃথা চেষ্টা করে দ্রুত পথ হেটে চলেছি ! হঠাৎই স্লিপ খেয়ে ভারসাম্য রক্ষা করতে না পেরে চিৎপটাং ! শুনতে পেলাম বেলকুনি থেকে প্রাণ ভোলানো হাসির শব্দ । ঐ হাসিতেই সেদিন আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়ার সাথে সাথে তোমার প্রেমেও লুটিয়ে পড়েছিলাম।যদিও ঐদিন অনেক চেষ্ট করেও আমি তোমাকে দেখতে পাইনি ! কাদা গাঁযে একটা ছেলে একঘন্টা বৃষ্টিতে ভিজে দাঁড়িয়ে ছিলো তোমার বাসার সামনে।তুমি তোমার হাত দুটো পর্দার আড়াল থেকে বৃষ্টির পানিতে ভেজানোর চেষ্টায় ব্যস্ত ছিলে আমাকে দেখেছিলে কিনা জানি না ।


তার পর থেকে প্রতিদিন যেতাম তোমার বাসার সামনে ! তোমাকে দেখতে । সেদিন ৫ই আষাঢ়, আষাঢ়ের ঢল নেমেছিল । বৃষ্টিতে ভিজতে আমার বরাবরই ভালো লাগে সেদিন ও তোমার বাসার সামনে ভিজতে ছিলাম । হঠাৎ তুমি বলে উঠলে আপনি তো একেবারে ভিজে গেছেন কোথায় যাবেন। তোমার পানে চেয়ে ১০মিনিট আমি ভাষা হারা হয়েছিলাম।তোমার হাসির শব্দে আমার চেতনা ফিরেছিল। তুমি সেদিন আমাকে আর কিছুই বলার সুয়োগ দাওনি।
জানি না তুমি আমাকে কিছু বলতে চাও কিনা কিন্তু আমি তোমকে বলতে চাই তোমার কি শোনার সময় হবে???


সেদিন ১০ই আষাঢ় তোমাকে ডেকে বলেছিলাম “এই একটু শোনো ” তুমি এসেছিলে আমি বলেছিলাম “ তোমার সাথে ২৯ লাইন কথা বলতে চাই তোমার সময় হবে” তুমি বলেছিলে------------
তুমি: ২৯ লাইন কেন?
আমি: ঠিক ২৯ লাইন কথা বলার মতো কিছু কথা আমার আছে তাই !
তুমি: কিন্তু আমার যে ২৯ লাইন শোনার মতো সময় হবে না।
আমি: তাহলে থাক আশি !
তুমি: ঠিক আছে আপনি ১০ লাইন বলতে পারেন।
আমি: না ! ঠিক আছে তুমি তোমার কজে যাও ।
এ কথা বলেই আমি সেদিন চলে এসে ছিলাম কিন্তু তুমি আমার পথ পানে চেয়েছিলে!


সেদিন ছিল ১৫তারিখ আমার ভিষন জ্বর । গত দুই দিন তোমার বাসার সামনে যায়নি আমি । আমি এখনো জানি না আমাকে নিয়ে তুমি ভাবতে শুরু করেছো কি না । তোমার ছোট ভাইকে দিয়ে যখন তুমি আমার খোজ নিয়েছিলে ১৬তারিখ বিকেলে তখন আমি নিশ্চিত হয়েছিলাম যে তুমি আমাকে নিয়ে ভাবো।


২০ তারিখ তোমার বাসার সামনে বসে আছি আকাশ আজ ভিষন রকমের মেঘলা ! মনে হচ্ছে এখনি বৃষ্টি নামবে । তুমি আমাকে বলেছিলে ইসারায় এখান থেকে না যেতে । আমি বসে তোমার অপেক্ষায় !! ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো তুমি ঐ বৃষ্টিতে ভিজে এসেছিলে আমার কাছে ! বলেছিলে-----
তুমি : আজ বৃষ্টির সুরে সুরে শুনবো আপনার ২৯ লাইনের কথা ।
আমি: আমি বলেছিলাম বৃষ্টির সুর তুমি শুনতে পাও??
তুমি : হ্যা পা্য়।পাই বলেই তো বলছি বৃষ্টির সুরে বলেন যেন আমি, আপনি আর
বৃষ্টি ছাড়া কেউ শুনতে না পাই।
আমি: তোমার সামনে মাথা হেলিয়ে বলেছিলাম তোমার মনের উঠোনে বৃষ্টি হয়ে
ঝরার অনুমতি চাই !!
তুমি : সে কি কথা ???
আমি : আমার এলোমেলো জীবনের দাঁড়টা আমি তোমার হাতে দিতে চাই নেবে!!
তুমি : লজ্জা পেয়ে বলেছিলে যাহ!
বলেই দৌড় দিয়ে চলে গেলে তোমার উত্তরের অপেক্ষায় ছিলাম দাঁড়িয়ে।
২৫ তরিখ তোমার সাথে আবার দেখা তুমি ইসারায় বলেছিলে তুমি আমার । মনে পড়ে, সেদিন তুমি একটা সুন্দর দেখতে শোপিজ দেখিয়ে বলেছিলে এভাবেই তুমি আমার জীবনে থাকতে চাও।
এবার নেমে এলো সেই কালো অধ্যায় আমাদের জীবনে!! সেদিনের তোমার কথা দেওয়া দেখে লিল তোমার বাবা !!
সেদিন থেকে তোমার আমার দেখা হওয়া বন্ধ । তখন তো আর মোবাইল নেই যে তোমাকে ফোন করবো।তোমার বিরহে আমি মরো মরো । কৃষ্ণ বিরহে রাধার যেমন হয়েছিল তোমর বিরহে আমার তেমানি দশা হয়েছিল।
এদিকে তোমার বাসার সামনে যাওয়া আমার নিষেধ । পাড়ার যতো দাদারা আমাকে বলেছিল তোমার বাসার সামনে যেন আমাকে না দেখে।
আমি কয়েক বার তোমার খোজ নেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম কিন্ত ব্যার্থ হয়েছি।
আজ ৩০ তারিখ তোমার বিয়ে তোমার বাবার পছন্দের ছেলের সাথে !! বিয়ের সব আয়োজন হয়েগেছে । বর আসবে রাতে ! আমি এদিকে আসফাস করছি আমার জীবন টা মনে হয় ছাই হয়ে যাবে । আমি জানতাম তুমিও ওদিকে আমার মতোই আসফাস করছো মুক্তির জন্য ।
শেষ রাত শ্রাবণ মাসের ১ম দিন তোমার বিয়ে হয়ে গেল । তুমি আমার থেকে আর আমি তোমার থেকে চিরদিনের জন্য আলাদা হয়ে গেলাম।
সেদিন খুব কেঁদেছিলাম তাই আামি আজো অপেক্ষা করে থাকি শ্রাবনের শুধু একটু প্রাণ ভরে কাঁদবো বলে!

No comments:

Post a Comment