গল্প - অতঃপর কবিতা

অতঃপর কবিতা

আমি তোমার জন্য কতোটা করেছি সেটা যদি সহজ করে বলতে পারতাম তাহলে প্রকৃতি আমাকে অসম্পূর্ণ করে দিতো!! ......মিতুল আহমেদ।

কবিতা

গল্প

বিষন্ন ভাইয়োলিন

মিতুল আহমেদ

পর্ব-১

গভির রাত কাজের সাথে সাথে রাত জাগা পাখিদের মত নিরবে রেডিও শুনছি। ভালোবাসা হারিয়ে যারা রাত জাগা পাখিদের দলে নাম লেখায় আমি তাদের দলে নই ! আজ হঠাৎই তাদের একটা বিশাল দলের সাথে পরিচিত হয়ে গেলাম। যারা ভালোবাসা হারায় তাদের প্রত্যেকের মধ্যে একটা কমন ব্যাপার কাজ করে আর সেটা হলো প্রকৃত ভালোবাসাটাকে তাঁরা বাঁচিয়ে রাখতে জানে। ছোট ছোট বিষন্ন আর্তোনাদ আর বেহালার করুন সুর আজ ফেলে আসা দিনগুলোর কথা বড্ড মনে করিয়ে দিচ্ছে! ভাবনা গুলো আজ মস্তিষ্কের স্নায়ুগুলো টান টান করে দিয়ে যাচ্ছে...........................!!



পহেলা পৌষ সেদিন তোমার সাথে আমার দেখা হয়েছিল। এমনই গভির রাত ছিল সে সময়। গভির রাত পর্যন্ত আমি জাগতে পারি না ।কিন্তু সেদিন ছিল রাহুলের বোনের বিয়ে । আর সেই অনুষ্ঠানেই তোমাকে দেখেছিলাম । রাতের লাইটিং গুলোর মতোই তুমি ছিলে উজ্জ্বল ! আপন রূপের আলোয় মাতিয়ে ছিলে বিয়ে বাড়ি । তোমার কি এখনো মনে পড়ে আমাদের মধ্যে হওয়া প্রথম কথা কি ছিল? আমার স্মৃতিতে তা এখনো সজীব হয়ে আছে। তুমি বেখেয়ালে আমার গাঁয়ে নোংড়া পানি ফেলে দিয়েছিলে। আর আমি তোমাকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলতে গিয়েই আটকে গেলাম তোমার রূপের ঐ ধারালো অস্ত্রের কাছে। ঠিক কতো সময় আমি তোমার দিকে তাকিয়ে ছিলাম আমার সেটা মনে নেই । গভীর রাতের  স্মৃতি বলতে আমার কাছে আজ এটুকুই আছে । রাত জাগা পাখিদের মতো আমার বিষন্নতার কোন স্মৃতি নেই বলতেই পারি।


___এই তোমাকে না বলেছি রাত জেগে কাজ করবে না !
আমি: এই তো শেষ হয়ে এসেছে।
মাহমুবা: বাদ ! বলেছি না বাদ দাও।
আমি: তাহলে কি করবো । আর তুমি ঘুমাও নি কেন?
মাহমুবা: তুমি ভালো করে জানো যে তোমার হাতের কফি না খেলে আমার ঘুম হয় না । বুঝছো না যে কেন ঘুম হয় না।
আমি: আচ্ছা ঠিক আছে তুমি একটু অপেক্ষা করো আমি এখুনি নিয়ে আসছি।
মাহমুবা: আমি ছাদে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।

আমি চললাম রান্না ঘরে বউ এর জন্য কফি বানাতে! পানি গরম হতে হতেই পরিচয়টা সেরে ফেলি । আমি মুহীব ছোট একটা সরকারি চাকরি করি । আর সেদিনের সেই মেয়েটিই মহমুবা আমার একমাত্র বউ ব্যাস এইটুকুই । অনেকের অনেক রকম পরিচয় থাকে কিন্তু আমার এই টুকুই ভালো লাগে । আমি সাধারণ জীবন যাপনে বিশ্বাসী । এতো ভাবগাম্ভির্য আমার ভালো লাগে না ।

কফির মগ হাতে আমি চললাম ছাদের দিকে। ছাদে গিয়ে দেখলাম মাহমুবা বসে আছে কিন্তু ভাবনায় ডুবে আছে। কাছে গিয়ে..

আমি: এই তোমার কফি।
মাহমুবা: উহ! হ্যা দাও।
আমি: কিছু ভাবছো ? তোমার কি মন খারাপ।
মাহমুবা: না!তেমন কিছু না ।
আমি: তোমার শরীর কি খারপ করছে ? তাহলে কফি থাক চলো ঘুমাবে।
মাহমুবা: না শরীর খারাপ করছে না । তুমি আমার  পাশে একটু বসবে?
আমি: হুম! অবশ্যই বসবো। কিন্তু বলতে হবে কি ভাবছিলে।
মাহমুবা: আচ্ছা বলোতো তোমার রাত জাগার এই অভ্যাস টা কবে থেকে হয়েছে।
আমি: কবে থেকে ? মনে করতে পারছি না। তুমি বলো।
মাহমুবা: তুমি না সব ভুলে যাও। দূর যাও তোমার সাথে কথাই বলবো না।

আমার ইচ্ছা হয় মাহমুবা আমার উপর রাগ করুক । আর গাল ফুলিয়ে বসে থাকুক । কারণ তো সেই একটাই তাই না । না ! তা নয় মাহমুবা কে সব সময়ই ভালো দেখাই শুধু মাত্র রাগলে কেমন ফ্যাকাসে হয়ে যায় মেয়েটা । তাই রাগাই ।
আসলে । সেদিন বিয়ে বাড়িতে ঐ অবস্থার পর পরের দিন আমাদের আলাপ হয় । 
আমি: এই মেয়ে ?
মেয়ে: আমার নাম মেয়ে না । মাহমুবা।
আমি: বাহ! সুযোগ পেয়েই নিজের নাম টা শুনিয়ে দিলেন।
মাহমুবা: তো আপনার টাও শুনিয়ে দিন না ।
আমি: ওরে বাপরে বাপ! এতো মেয়ে নয় যেন রিপোটার।
মাহমুবা: যদি তাই মনে হয় তবে তাই । এখন বলেন তো  আপনার উদ্দেশ্য কি?
আমি: উদ্দেশ্য কি আমার না আপনার?
মাহমুবা: মানে? আপনি কি বলতে চাইছেন?
আমি: আমার গাঁয়ে নোংড়া পানি ফেলার কারণ কি?
মাহমুবা: আসলে আমি ইচ্ছা করে ফেলিনি ওটা ( অনেকটা লজ্জিত হয়ে)
আমি: আচ্ছা আচ্ছা এখন আর লজ্জা পেতে হবে না ।
মাহমুবা: তো আপনার নাম টা কি বলা যাবে।
আমি : আমি মুহীব । বন্ধুর বোনের বিয়েতে এসেছি এখানে।
মাহমুবা: আমার খালাতো বোনের বিয়ে । মানে রাহুল ভাইয়া আমার খালার ছেলে ।
আমি: এখন কি আপনার কোন কাজ আছে ? 
মাহমুবা: না। তেমন কোন কাজ নেই ।
আমি: চলুন না পুকুরের পাড় দিয়ে একটু হেটে আসি। অবশ্য যদি আপনার কোন আপত্তি না থাকে।
মাহমুবা: যেতে পারি একটা শর্ত আছে ।
আমি : কি শর্ত ?
মাহমুবা: শর্ত হলো গল্প করতে হবে। আমি শুনেছি আপনি খুব ভালো গল্প বলতে পারেন।
আমি: ঠিক আছে । কিন্তু একটা সমস্যা আছে । সেটা হলো যদি গল্পের পরিবেশ টা সৃষ্টি হয় তবেই গল্প বলবো।
মাহমুবা: ঠিক আছে চলুন।

                                                                    চলবে.........





No comments:

Post a Comment